মফস্বলের কবিতা
০৭.
অসুস্থ শরীর
মাটির অতলে কালো জল
নদীর চরায় নীল শঙ্খ জেগে আছে মানুষের মতো
রাত্রির সাম্পানে
সাজিয়েছে সমস্ত সংসার
স্রোতের সম্মুখে কালো জল
আমাদের সঙ্গ ছেড়ে
বহুদূর
লতাগুল্মহীন
জঙ্গলের দিকে যাচ্ছে
যেন সে বনের পাখি
মাঝে-মাঝে মনে হয়
ফিরে যাই
দেখে আসি সুখপাখি
গভীর দূরত্বে পোড়ে বৈষয়িক সাম্পান
গভীর দূরত্ব থেকে ভেসে আসে শঙ্খনিনাদ
কালো রঙের মেঘ
বৃষ্টির তোড়ে ধুয়ে যায় অসুস্থ শরীর
সুখপাখি…
০৮.
পাফাটা বাপের কপালে খরাদাহ ক্ষেত
মা আমার ছেঁড়া শাড়িতে মানিয়ে নিয়েছেন বেশ
গামছা তৈরির পদ্ধতি জানা থাকলে
এবছর অনেক মাছ ধরা যেত
বিলের সঙ্গে সখ্যতা থাকলে
নাড়ার আগুনে
পুড়তো না জলবতী মেঘের কেশ
পাফাটা বাপ ক’দিন হলো ছোট মেয়েকে দেখতে গেছেন
ছেঁড়াশাড়িমা ক’দিন হলো বড় মেয়ের আচি করতে গেছেন
ছাগলের পিছনে ছুটতে-ছুটতে পাগল হয়ে যাচ্ছি
‘অভাবে স্বভাব নষ্ট’
অভাবের ধর্মগুণ পাগলের চিন্তার মতো এলোমেলো
মা-বাবা ফিরে এলেই গঞ্জের হাটে ফুরিয়ে যাবে ছাগলের মায়া
০৯.
একা নিঃসঙ্গ অস্থির
নগ্ন খিস্তি-খেউর দৌড়ঝাঁপ
কথা বলে না
গান গায়
শত বছরের চেনা মানুষের ছায়া
শরীরে জড়িয়ে হেঁটে বেড়ায়
ভেতরে ক্ষরণ নিরানন্দ
আত্মবিবর থেকে বেরিয়ে কোথায় যেন যাচ্ছে
বিচ্ছিন্ন সত্তাহীন অসামাজিক
নগ্ন খিস্তি-খেউর দৌড়ঝাঁপ
সামাজিক সুতোটি ছিঁড়তে-ছিঁড়তে সম্পূর্ণ ছিঁড়ে ফেলেছে
বিষণ্ন অস্থির
আমাদেরই লোক
চেনাজানা
কোথায় যেন যাচ্ছে…
কথা
কবিতা-বিষয়ে আমার কোনো অনুভূতি নেই। প্রেরণাতেও বিশ্বাস করি না। কবিতাতে অনুভূতি খুঁজবেন পাঠক। এবং পাঠকই সেই অনুভূতি দ্বারা আলোড়িত হবেন। কবিতা-পাঠের ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণার প্রয়োজন আছে। অনুপ্রণিত পাঠকই কবিতার প্রেম-প্রেরণায় জর্জরিত হন। এমনটাই হয়ে এসেছে। এখন এসবের বিপরীত কথা শুনি। কেউ কবিতা পড়তে চান না। কবিতা দূর্বোধ্য হয়ে যাচ্ছে। এসব কোনো অভিযোগ হতে পারে না। আসলে পাঠকের ভেতরে কাব্যপ্রেমের মৃত্যু ঘটেছে। এ থেকে বাঁচার উপায় কবিতার সঙ্গে জীবনের সংযোগ ঘটানো। মূলত, কবিতা লেখার কাজটি ভূতগ্রস্ত কোনো ব্যাপার নয়। এমনকি কবিতাও কারো ঘাড়ে চেপে বসে না। একটি শব্দ, একটি বাক্য সম্পূর্ণ একটি কবিতার পাটাতন হতে পারে, এই যা। মাটি, পাটি, বাঁশের মাচান সরিয়ে কবর থেকে লাশ বের কোরে এনে তাকে জীবিত করা যায় না। আমাদের চির ঐতিহ্যের বাঁশের খাটে পাতা পাটিতে শুয়ে থাক মাটিমাখা শব্দ ছাড়া আর কিছুই কবিতা নয়। কবিতা লাঙলের ফলায় চড়ে উঠে আসে উর্বর জমি-কাগজের বুকে। এছাড়া কবিতা সম্পর্কে বলার কিছু নেই। কবিতা-পাঠই মূল কাজ। আর, এই কাজের ভেতর থেকেই বেরিয়ে আসে কবিতার অনুভূতি ও প্রেরণাজাত কাব্যিক প্রাণগাথা।
কবিতা
রাস্তা
গত শনিবার রাস্তায় একটি মৃত কুকুর পড়েছিলো
গত রোববার বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে রাস্তায় মিশে গিয়েছিলো একটি শিশু
গত সোমবার পুলিশেরা রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো নিরীহ যুবককে
গত মঙ্গলবার একজন রাস্তা থেকে ডেকেছিলো আমাকে, আমি যাই নি
গত বুধবার জগিঙে গিয়ে রাস্তায় পড়েছিলো তামজীদের বাবা
গত বৃহস্পতিবার রাস্তার কাহিনী লিখতে এসেছিলো অপরিচিত একটি লোক
আজ শুক্রবার বাদ মাগরিব রাস্তার নামে গায়েবি জানাযা হবে